বিপ্লবী ঐক্য মোর্চা গঠনে Revolutionary Communist International Tendency (RCIT) এর ছয় দফা প্রস্তাবনা,
ফেব্রুয়ারী ২০১৮
১ ) সাম্রাজ্যবাদীদের অভ্যান্তরিন দ্বন্দ্ব : আমেরিকা, ইইউ, জাপান, রাশিয়া ও চীন
বিপ্লবী শক্তিকে সাম্রাজ্যবাদী সংকটকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করেই ভবিষৎ রণকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
মার্কিন, ইইউ এবং জাপানের সাম্রাজ্যবাদী অবস্থানকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি নতুন উত্থানশীল শক্তি রাশিয়া ও চীনকেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে হলে ব্যর্থ হলে রণকৌশল
নিধারণে বিপর্যয় ঘটবে । সাম্রাজ্যবাদীদের অভ্যান্তরিন দ্বন্দ্বে বিপ্লবী শক্তি কোন পক্ষকেই সমর্থন করবে না। বিপ্লবীদের প্রধান স্লোগান হবে ' নিজ দেশের শাসক শ্রেণীকে পরাজিত ও উৎখাত কর। '
চীন ও ভারত নানান প্রতিদ্বন্দ্বী মূলক সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সংঘাত যে কোন সময়ে যুদ্ধের রূপ নিতে
পারে। চীন সাম্রাজ্যবাদী ও ভারত আঞ্চলিক শক্তি। চীন ও ভারত দ্বন্দ্বে / যুদ্ধে, ভারত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রক্সি হিসাবে কাজ করছে। এ যুদ্ধে বিপ্লবীরা যুদ্ধরত উভয় পক্ষের বৈপ্লবিক
পরাজয়ের শ্লোগান তুলবে। নিজ দেশের শাসক শ্রেণীকে পরাজিত ও উৎখাত করার লক্ষে নিজ দেশে জনসাধারণকে সংগঠিত করবে।। সাম্রাজ্যবাদের অভ্ভন্তরীন দ্বন্দ্বে মন্দের ভাল কোন পক্ষ নেই, সকল পক্ষই সমানভাবে
প্রতিক্রিশীল।
সাম্রাজ্যবাদকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করতে অসমর্থ হলে মার্ক্সবাদীরা সচেতনভাবে বা অজ্ঞানভাবে এক বা
অন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে।
২ ) সাম্রাজ্যবাদ ও নিপীড়িত জনগণের মুক্তির জন্য ধারাবাহিক সংগ্রাম সমর্থন
সম্ৰাজ্যবাদের কিংবা সাম্রাজ্যবাদের ছায়া শক্তি এবং নিপীড়িত জনগণ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিরোধে,
বিপ্লবীরা সবসময়ই নিপীড়িত জনগণ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির পক্ষে দাঁড়াবে। নিপীড়িত জনগণ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির পক্ষে দাঁড়ানো কোনোভাবেই প্রতিরোধ শক্তিকে (যেমন, ক্ষুদ্র বুর্জোয়া ইসলামপন্থী,
জাতীয়তাবাদী) রাজনৈতিক সমর্থন হিসাবে বিবেচিত হবে না।
বিপ্লবী শক্তি রাশিয়াতে চেচেন বা চীনের উইগুরদের মতো নিপীড়িত জাতির মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করে।
কাতালোনিয়া (স্পেনের ) মত জাতি সুমুহের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন করে।
বিপ্লবীরা দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আক্রান্ত রাষ্ট্র ও নিপীড়িত জাতির পক্ষে
দাঁড়াবে। বর্তমান সময়ে উত্তর কোরিয়া, আফগানিস্তান, সিরিয়া, মালি, সোমালিয়া সহ দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিদুদ্ধে লড়াইরত শক্তিকে সমর্থন করে।
বিপ্লবীরা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সীমান্ত অভিবাসীদের জন্য উন্মুক্ত করা, অভিবাসীদের
নাগরিকত্ব অধিকার, ভাষা, সমান মজুরি সহ সমানতার জন্য লড়াই করবে।
বিপ্লবীরা কখনই সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের অভ্ভন্তরীন কোন পক্ষই সমর্থন করবে না , (উদাঃ, ব্রেক্সিট বনাম ইইউ;
ক্লিনটন বনাম ট্রাম্প)।
৩ ) দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, ইহুদীবাদী ( Zionism) সহ সকল প্রকার প্রতিক্রিয়াশীলতা
ও সম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে নিরন্তন সমর্থন
গত এক দশকে, ২00৮ সালে ফিলিস্তিন, তিউনিশিয়া, ইরান, সিরিয়া, মিশর, ইয়েমেন, সুদান ও অন্যান্য দেশে
গণ অভ্যুথান গুলো শ্রেণী সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এই গণআন্দোলন গুলো যৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। এই গণআন্দোলন গুলোর পরাজয়ের কারণেই মিশরে আল সিসি এর সামরিক
শাসন ,সিরিয়ায় আসাদের মত প্রতিক্রিয়াশীলরা ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়েছে।
গণআন্দোলন কিন্তু থেমে নেই । ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, মিশর এর গণআন্দোলনের
ঢেউ তিউনিশিয়া, ইরান, সুদান এবং মরক্কোর মতো নতুন দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে । তিউনিশিয়া ও ইরানের পুঁজিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন মধ্য প্রাচ্যের দেশে দেশে
ঢেউ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার কারণে সারা দুনিয়ায়
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও বর্ণবাদী ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের আওয়াজ জোরালো হয়ে উঠছে। সাচ্চা বিপ্লবীরা দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচার বিরোধী
আন্দোলনকে নিঃশর্ত ভাবে সমর্থন করবে কিন্তু কোন ভাবেই প্রতিক্রিশীল রাজনৈতিক শক্তির পিছনে দাড়াবেনা।
অনেক প্রগতিশীলরা ২০১১ থেকে শুরু হওয়া আরব বিপ্লবকে সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে, এই বিপ্লবের পতন হয়েছে
কিংবা কোন সম্ভবনা এমন ভেবে যারা এই ধরণের আন্দোলনকে সমর্থন করতে গড়িমসি করে তারা প্রকৃত বিপ্লবী নন।
বিপ্লবীরা আঞ্চলিক শক্তিগুলোর এর মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীল যুদ্ধের বিরোধিতা করে। উদাহরণ হিসাবে সৌদি
আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, মিশর, সুদান, ইথিওপিয়া যুদ্ধ গুলোর বিরোধিতা করে। বিপ্লবীরা যে কোন যুদ্ধের চরিত্রের বিশ্লেষণ করে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভূমিকা (বিশেষ করে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন) এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করে বিপ্লবী কৌশল নির্ধারণ করবে।
৪ ) গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণের বিরুদ্ধে বিপ্লবী সংগ্রাম
শোষণ - বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমিক সহ নিপীড়িত মানুষদের সংগঠিত করার প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিক ভাবে শ্রেণী
অবস্থান, শ্রেণী শত্রূ চিহ্নিত করা। বিপ্লবীরা দেশে দেশে সকল ধরণের প্রতিক্রিয়াশীল, একনায়কতন্ত্র, নামে - বেনামে সামরিক শাসন, দুর্নীতিবাজ , কর্তৃত্ববাদী এবং মেকী
গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামকে সমর্থন করবে। বিপ্লবীরা দেশে দেশে সকল ধরণের জাতি ও ভাষার সমান অধিকার এর পক্ষে এবং জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামরত
দের পাশে দাঁড়াবে।
দেশে দেশে শাসক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার বিকল্প বিপ্লবীদের নেই , প্রতিক্রিশীল
শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার অবকাশ নেই। শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নীরবতা ও নিরপেক্ষতা, শ্রমিক শ্রেণীর বিশ্বাসঘাতক।
৫) গণআন্দোলনে যুক্ত ফ্রন্ট কৌশল কৌশল
বিপ্লবীরা গণ আন্দোলনের প্রশ্নে সকল সংকীর্ণতাকে পাশকাটিয়ে যুক্ত ফ্রন্ট কৌশল গ্রহন করবে। গণ আন্দোলনের
নেতৃত্বে বিপ্লবীদের হাতে নেই সেই অজুহাতে গণ আন্দোলন থেকে বিরত থাকা আন্দোলনের পিছনে ছুরিকাঘাতের সামিল । যুক্ত ফ্রন্ট উদ্যোগ হচ্ছে যার মাধ্যমে কমিউনিস্টরা বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে
শ্রমিকশ্রেণির মৌলিক স্বার্থ রক্ষার জন্য স্বকীয়তা বজায় রেখে অন্য দলগুলোর সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করে। গণ আন্দোলনে যুক্ত ফ্রন্ট কৌশল প্রয়োগ না করে আন্দোলন চালিয়ে নেবার কথা বলা বিমূর্ত
বিবৃতি ছাড়া কিছু নয়। বিপ্লবীরা তথাকথিত "প্রগতিশীল" বুর্জোয়া দলগুলোর অধীনস্থ / জোটবদ্ধ পপুলার ফ্রন্ট গঠনের বিপক্ষে।
৬ ) বিপ্লবী পার্টি গঠন
একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্যে দিয়েই সকল ধরণের প্রতিক্রিশীলতার অবসান ও শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তি
সম্ভব। শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়েই পুঁজিবাদী শ্রেণির শোষণ বঞ্চনার অবসান হয়ে সমাজতন্ত্র অভিমুখে সমাজ গঠন সম্ভব। ইতিহাসের শিক্ষা, বিপ্লবী পার্টি ছাড়া গণআন্দোলনের ফসল, জনগণের
ত্যাগ - তিতিক্ষা মেহনতি মানুষের পক্ষে যায় না।
বিপ্লবী পার্টি শ্রমিকশ্রেণির সর্বাধিক রাজনৈতিক সচেতন এবং নিবেদিত যোদ্ধাদের সংগঠিত করে আন্দোলন সংগ্রাম
পরিচালনা করবে। একটি দেশে অথবা নিদৃষ্ট ভূখণ্ডের পার্টি আন্তর্জাতিক পার্টির অংশ হিসেবেই কাজ করবে। বিপ্লবী পার্টি দেশে দেশে বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে শ্রমিক শ্রেণীর
আন্তর্জাতিক গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে।
আমাদের ডাক
আমরা সকল সমাজতান্ত্রিক সংগঠন এবং কর্মীকে আহ্বান করছি প্রধান প্রধান কর্মসূচির ভিত্তিতে শ্রমিক
শ্রেণীর আন্তর্জাতিক পার্টি গঠনের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালানোর। শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক পার্টি গঠনের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালানোর। শ্রেণীর আন্তর্জাতিক পার্টি গঠনে লক্ষে
রাজনৈতিক প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক প্রস্তুতির জন্য যৌথ যোগাযোগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব বাড়ছে। RCIT আলোচনার জন্য উন্মুক্ত ও রাজনৈতিক সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গি , অভিজ্ঞতা ভাগ অপরাপর সংগঠনের সাথে সর্বাধিক
সম্ভাব্য সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত ।