Statement of the Revolutionary Communist International Tendency (RCIT), 27 February 2019, www.thecommunists.net
(এক ) ২৬ ফেরুয়ারি ২০১৯ ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের পূর্ব খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোট শহরে বিমান হামলা করে , ভারতীয় ৩০০ জন জঙ্গী নিহত হওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ বোমা হামলায় কেউ নিহত হওয়ার কথা অস্বীকার করে। অব্যাহত বিমান হামলার সময় পাকিস্তান দুটি ভারতীয় বিমান গুলি করে গুলি করে এক পাইলটকে আটক করে.একই দিনে চারজন পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হয়।
( দুই ) ভারত সরকার বিমান হামলাকে ১৪ ফেরুয়ারি ২০১৯ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামার এ জাইশ-ই-মোহাম্মাদ (জেএম), জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার জবাব হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে। এই হামলায় ৪২ জন ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনী সদস্য নিহিত হয়েছে। এই হামলার দায় জাইশ-ই-মোহাম্মাদ (জেএম) স্বীকার করেছে।
( তিন ) ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম বড় মতো পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত । ভারতের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নানান জরিপে মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টির জোট সাধারণ নির্বাচনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানের সম্ভবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তানে বিমান হামলার পেছনে ভারতের আসন্ন এপ্রিল - মে ২০১৯তে নির্বাচনের ভোটকে প্রভাবান্বিত করার বিষয়টি বহুল আলোচিত। পাকিস্তানে বিমান হামলার মধ্য দিয়ে হিন্দু গোঁড়ামিবাদ ও দেশ প্রেমেকে উস্কে দিয়ে ভোট ফায়দা নেয়ার পায়তারা থেকেই এই বিমান হামলা। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই পারমাণবিক অস্রধারী।
( চার ) পুলওয়ামাতে ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিহত হবার ঘটনাকে ' নিরাপত্তার ' অজুহাত হিসেবে ব্যাবহার করে ভারতীয় বাহিনী ব্যাপক গ্রেফতার, বাড়ি - বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক সহ প্রথম সারির বেশ কয়েক জন জাতীয়তাবাদী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় দমন পীড়নের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদী সংগঠন দই দিনের হরতালের পালন করে।
( পাঁচ ) RCIT -Revolutionary Communist International Tendency ভারতীয় আগ্রাসনের জোরালো প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতেই মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টির জোট কাশ্মীর ও পাকিস্তান আক্রমণের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে। ভারত ও পাকিস্তানের আধিপত্য বাদী লড়াইয়ে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিকরা কোন পক্ষকে সমর্থন করেনা। আমরা উভয় পক্ষের বিপ্লবী পরাজিত অবস্থানের আহ্বান জানাই।
( ছয় ) ভারত ও পাকিস্তানের দখল দারিত্ব ও যুদ্ধবাজের বিরুদ্ধে বিপ্লবীরা কাশ্মিরি জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন করে। ভারতীয়, পাকিস্তান এবং চীন কাশ্মীর দখল করে রেখেছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায় ৮ লাখ ভারতীয় সেনা, বিএসএফ , পুলিশ সহ নানান পদের সামরিক বাহিনী মোতায়ন করেছে ভারতীয় সরকার।প্রতি দশ কাশ্মিরিদের জন্য একজন ভারতীয় সৈনিক আছে। কাশ্মীরি সাধারণের জীবন সেনা খবরদারীরর হাতে জিম্মি। ১৯৮৯ সন থেকে যে গণবিদ্রোহ শুরু হয়েছে , এই গণবিদ্রোহে প্রায় একলাখ মানুষ ভারতীয় বাহিনীর হাতে খুন হয়েছে , ১০ হাজারের মত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ভারতীয় সেনাদের ব্যাবহৃত গাদা বন্দুকের ( pellet gun ) গুলিতে হাজার হাজার মানুষ আহত ও দৃষ্টিহীন হয়েছে। কাশ্মিরের জনগণ সবসময় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, এই সংগ্রামের প্রতি আমাদের আকুন্ঠ সমর্থন ।
(সাত ) RCIT- কাশ্মীর থেকে সকল বিদেশী সেনা ( ভারতীয়, পাকিস্তানী ও চীনা বাহিনী) প্রত্যাহারের জোর দাবী জানাচ্ছে। অবিলম্বে কাশ্মিরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ, কাশ্মির থেকে আধা সামরিক বাহিনী ও সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার ও সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (Armed Forces Special Powers Act - AFSPA) বাতিল করার দাবী জানাচ্ছি । আমরা কাশ্মীরের শ্রমিক, ও মেহনতিকে গণঅভ্যুথান - গণসংগ্রামের লক্ষ্যে সংগঠিত আহ্বান জানাচ্ছি। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে কাশ্মীরি মুক্তিকামী জনগণ কর্তৃক নিপীড়ন ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিরোধকে যৌক্তিক মনে করি। তবে গেরিলা আক্রমণের কৌশলকে ভুল এবং আত্মঘাতী হিসাবে বিবেচনা করি। আমরা কাশ্মীরে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী সংগঠনের মতাদর্শকে সমর্থন করি না। গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারের প্রতি আমাদের নিঃশর্ত সমর্থন।
(আট ) RCIT- কাশ্মিরি জনগণের স্বাধীনতারসংগ্রামকে পুরোপুরি সমর্থন করে। ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন কাশ্মীরি শোষণ মুক্ত ও সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে কাশ্মীরের মেহনতি জনগণকেই নিরন্তন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। আমরা কাশ্মীর সহ সকল জাতিসমুহের সমতা ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে নিজ নিজ দেশের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহ্বান জানাচ্ছি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিজয় এশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশনের সম্ভবনাকে এগিয়ে নিবে।
( নয় ) কাশ্মীরের আত্ম নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে , স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রশ্নে ভারতের বড় - বড় বামপন্থী দলগুলোর ভূমিকা ন্যাক্কার জনক। অবিভক্ত সিপিআই ১৯৫৩ সন পর্যন্ত কাশ্মীরের আত্ম নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে , স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিচ্ছিন্ন হবার অধিকারকে সূর্থন করতো।
আজকের সিপিআই , সিপিএম , ভারতীয় কাঠামোর মধ্যে কিছু স্বায়ত্ব শাসন ,কাশ্মীর থেকে সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে হলেও কাশ্মীরিদের পূর্ণ স্বাধীনতা অথবা গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরি জনগণের ভাগ্য নিধারণ করার পক্ষে নয়।
নকশাল আন্দোলনের সময় সিপিএম ( এম- এল ) সঠিক ভাবেই কাশ্মীর সহ ভারতের আত্ম নিয়ন্ত্রণের সংগ্রামরতদের ভারত থেকে পৃথক হওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে বহুধা বিভক্ত সিপিএম ( এম- এল ) এর অনেক গুলো ধারা কাশ্মীর থেকে সেনা প্রত্যাহার ও স্বায়ত্ব শাসন এর পক্ষে থাকলেও নিপীড়িত জাতিসমুহের স্বাধীন হওয়ার অধিকারের পক্ষে নয়।
আন্তর্জাতিকতার ,
নিহত সৈন্যদের প্রতি "সহানুভূতি ও সমবেদনা" প্রকাশের ছদ্দাবরণে পাকিস্তান ও ভারতের কোন কোন বামপন্থী দল শাসক শ্রেণীর পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। Jammu Kashmir Awami Workers Party, Radical Socialist (India) and the Pakistan Trade Unions Defense যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও ভারতীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম, গেরিলা আক্রমণ কে নির্লজ্জ ভাবে ' সন্ত্রাসবাদ ' হিসেবে অভিহিত করছে। (Joint Statement by the Jammu Kashmir Awami Workers Party, Radical Socialist (India) and the Pakistan Trade Unions Defense, 23 February 2019).
জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে কাশ্মীরি মুক্তিকামী জনগণ কর্তৃক নিপীড়ন ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিরোধকে যৌক্তিক মনে করি। তবে গেরিলা আক্রমণের কৌশলকে ভুল এবং আত্মঘাতী হিসাবে বিবেচনা করি। আমরা কাশ্মীরে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী সংগঠনের মতাদর্শকে সমর্থন করি না। গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারের প্রতি আমাদের নিঃশর্ত সমর্থন।
(দশ ) জাতি সুমুহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও নিপীড়িত জনগণ এর মুক্তি সংগ্রামের জন্য কাশ্মীর সহ পাকিস্তান, ভারত ও দেশে দেশে শ্রমিকশ্রেণির দল গঠনের বিকল্প নেই। RCIT পার্টি গড়ার সংগ্রামে অপরাপর বাম প্রগতিশীল শক্তির সমর্থন প্রত্যাশী।